জাহিদ হাসান:
মাদারীপুরে ইউটিউব দেখে ভাগ্য বদল হয়েছে আলতাফ হোসেন নামে এক যুবকের। তন্দুরী চা তৈরী করে নিজের কর্মসংস্থান তৈরী করেছেন নিজেই। দৈনিক আট থেকে দশ হাজার টাকার চা বিক্রি করেন আলতাফ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শিক্ষা নিয়ে যে ভাগ্য বদলের সহায়ক হতে পারে তারই এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন মাদারীপুরের এই তরুন চা বিক্রেতা। মাদারীপুরের সদরের প্রত্যন্ত অঞ্চলের চা বিক্রেতা আলতাফ মাহমুদের চায়ের কথা এখন সবাই জানে। শুধু মাদারীপুর ই নয় আশ পাশের উপজেলাসহ পার্শবর্তী কয়েকটি জেলা শরীয়তপুর, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ ও বরিশাল থেকে মানুষ এসে ভিড় করে তার তান্দুরী চা খেতে। আলতাফের তান্দুরী চা যেন ধীরে ধীরে স্থানীয় ঐতিহ্যে রূপ নিতে শুরু করেছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, মাদারীপুর সদর উপজেলার কেন্দুয়া ইউনিয়নের দত্তেরহাট গ্রামের তরুন আলতাফ মাহমুদ আর্থিক সংকটে লেখাপড়া খুব বেশি করতে পারেনি। পেয়ারপুর ইউনিয়নের ঘচকচর ধেরী বাজারে বাবা তোফাজ্জেল ফকিরের ছিল ছোট্ট একটি চায়ের দোকান। সেখানেই চা তৈরীর হাতেখড়ি হয় আলতাফের। বাবা স্বল্প আয়ে সংসার চালিয়ে পড়ার খরচ যোগাড় না হওয়ায় সপ্তম শ্রেনীতেই লেখা পড়ার ইতি টানে আলতাফ। পরে বাবার সাথেই চায়ের দোকানে কাজ শুরু করে। বাজারের অসংখ্য চায়ের দোকানের মাঝে ছোট্র একটি দোকানে শুধুমাত্র চা বিক্রি করে স্বচ্ছলতার আলো দেখতে পাচ্ছিলেন না আলতাফ মাহমুদ। বিষয়টি গভীরভাবে ভাবিয়ে তোলে তাদের। অল্প শিক্ষিত হলেও ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খুজতে থাকে তার সমস্যার সমাধান। কোন একদিন ইউটিউবে পেয়ে যান ভারতের ঐতিহ্যবাহী তান্দুরী চা তৈরির রেসিপি। সেই ভিডিও দেখে আলতাফ মাহমুদ রপ্ত করেন তান্দুরী চা বানানোর পদ্ধতি । এক বছর আগে সেই ছোট্র চায়ের দোকানেই শুরু করেন তান্দুরী চা তৈরি। গরুর দুধের সর, কাজু বাদাম, ওভালটিন, টেরাবিকা, চকলেট সিরাপসহ বিভিন্ন উপকরন দিয়ে তৈরি হয় তার তান্দুরী চা। মাটির তৈরী ছোট্ট হাড়ি প্রথমে আগুনে পুড়িয়ে নেন ভাল করে। মাটির তৈরি ছোট্ট হাঁড়িতে ঢেলে চা পিপাসুদের পরিবেশন করেন আলতাফ। পোড়া মাটির গন্ধে সুস্বাদু হয়ে উঠে চা। সেই চা পান করতে আলতাফ মাহমুদের দোকানে প্রতিদিন বিকেল সাড়ে ৪ টা থেকে রাত সাড়ে ৯ টা পর্যন্ত চা পিপাসুদের লাইন লেগেই থাকে। প্রতিদিনই মাদারীপুরের বিভিন্ন উপজেলা, পার্শ্ববর্তী শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ, বরিশাল, ফরিদপুরের ভাঙ্গাসহ বিভিন্ন এলাকার দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ প্রত্যন্ত এলাকা পেয়ারপুর (ঘটকচর ধেরী) বাজারে ছুটে আসে আলতাফের তান্দুরী চা পান করতে। আলতাফ প্রতি কাপ তান্দুরী চা ৩০ টাকা, চকলেট তান্দুরী ৫০ টাকা, কফি তান্দুরী ৫০ টাকা, কফি রেগুলার ৩০ টাকা, চকলেট চা ৩০ টাকা, মালাই চা ২০ টাকা, দুধ চা ১০ টাকা ও গ্রীন টি প্রতি কাপ ১০ টাকায় বিক্রি করেন। প্রতিদিন ৩-৪ শ কাপ চা বিক্রি করেন আলতাফ। আগে যেখানে প্রতিদিন ৪-৫ শ টাকার চা বিক্রি করতেই হিমশিম খেতে হতো সেখানে এখন প্রতিদিন ৮-৯ হাজার টাকার তান্দুরী চা বিক্রি করেন আলতাফ। শুক্রবারসহ ছুটির দিনে ১০-১২ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয় বলে আলতাফ জানান। ইউটিউব থেকে শেখা এই তান্দুরী চা-ই ভাগ্য বদল করেছে আলতাফ মাহমুদের। বর্তমানে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সুখেই রয়েছেন তিনি।
স্বর্না আক্তার নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা এই তান্দুরী চায়ের কথা অনেক শুনেছি। তাই বন্ধুরা মিলে আসছি চা পান করতে। স্বাদটা দারুন লাগছে। সিরিয়াল পেতে অনেক সময় লেগে যায়।
কিবরিয়া নামে এক ব্যক্তি জানায়, আলতাফ ভাইয়ের চা খেতে প্রায়ই আসি। বন্ধু-বান্ধব আসলে তাদের এখানে তান্দুরী চা দিয়ে আপ্যায়ন করাই। সবাই চা খেয়ে খুব খুশি হয়।
পেয়ারপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান লাভলু হাওলাদার বলেন, আলতাফের চা এখন স্থানীয় ঐতিহ্যে পরিনত হতে চলছে। এখানে বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ চা পান করতে আসে। এটা আমাদের অনেক ভাল লাগে। সামাজিক মাধ্যম যে কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যম হতে পারে তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত চা বিক্রেতা আলতাফ। আলতাফকে নিয়ে আমরা গর্বিত।
সম্পাদক ও প্রকাশক: জাহিদ হাসান, ইমেইলঃ dainikdesherkhabor
Copyright © 2025 দেশের খবর. All rights reserved.